শ্রীনগরে ৪ বছরেও সম্পন্ন হয়নি স্কুল ভবনের দোতলার নির্মাণ কাজ! শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১০:৫১ PM, ০১ জানুয়ারী ২০২৩

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার কুকুটিয়া ইউনিয়নের ৫০নং খোদাই বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মিত নতুন একতলা ভবনটির উন্নতিকরণের জন্য দোতলার নির্মাণ কাজ ৪ বছরেও ঠিকাদার সম্পন্ন করেননি।কাজ না হওয়ার ফলে বিদ্যালয়ের পুরাতন টিনশেডের জরার্জীণ শ্রেণিকক্ষে বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম চলছে।শ্রেণিকক্ষের অভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।একদিকে যেমন সরকারের লাখ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মিত একতলা ভবনটির অবকাঠামো বেহাল হয়ে পরছে পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা এর সুফল পাচ্ছেনা।

অপরদিকে সঠিক তদারকীর অভাবে বিদ্যালয়ের ভবনের দুতলার কাজে ঠিকাদার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কাজে অনিয়ম করে পার পাচ্ছেন।এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।এ অবস্থায় ঠিকাদার মো. মিজান শেখের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এলাকাবাসী জানায়, বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নিচতলায় একটি শ্রেণিকক্ষের তালা ভাঙ্গে বহিরাগতরা। অভিযোগ উঠে ভিতরে চলে বহিরাগতদের মাদক সেবন।এছাড়া ভবনের নির্মিত দোতলায় খোলাকক্ষে রাতের আঁধারে বসে মাদকের আসর, চলে অনৈতিক কর্মকান্ডও।এ অবস্থায় রাতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সৃষ্টি হয় ভূতুরে পরিবেশের।বিদ্যালয়ের কাজ দ্রুত সম্পন্ন ও শিক্ষা কার্যক্রমের অগ্রগতি ধরে রাখতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে নির্মিত খোদাই বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য একতলা ভবন নির্মাণ হলে পুরাতন ভবন ছেড়ে নতুন ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।পরে ২০১৮ সালে ভবনটির দোতলার নির্মাণ কাজের সুবিধার্থে পূনরায় সাবেক টিনশেডে শিক্ষার্থীদের স্থানান্তর করা হয়।দীর্ঘ ৪ বছর অতিবাহিত হলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মো. মিজান শেখ বিদ্যালয়ের কাজ সম্পন্ন করেনি।এছাড়াও ঠিকাদার মো. মিজান উপজেলার উত্তর কোলাপাড়া, শিবরামপুর, দক্ষিণ পাইকশা ও যুশুরগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজের টেন্ডার পায়।এসব বিদ্যালয়ের কোন কাজই সম্পন্ন হয়নি।

সরেজমিনে গিয়েও বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের বেহাল চিত্র চোখে পড়েছে।লক্ষ্য করা যায়, ভবনের আশপাশে আগাছা ও ঝোপ-জঙ্গলে ভরে গেছে।নির্মিত একতলা ভবনের কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে শ্রেণিকক্ষের কাঠের দরজাগুলো উলু-ঘুনপোকায় খাচ্ছে।

জানা গেছে, নিচতলার একটি কক্ষের তালা ভেঙ্গে নিরাপদে চলে মাদক সেবন।সন্ধ্যার পরেই এখানে বহিরাগত মাদকসেবীদের আনাগনা বাড়ে।অন্ধকারে ভূতুরে পরিবেশে চলে অনৈতিক ও অসামাজিক কর্মকান্ড।এ পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের মাঝে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করতে দেখা গেছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়টিতে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১০৫ জন।মোট শিক্ষক ৫ জন।খোদাই বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাসুম মিয়া বলেন, এ অবস্থায় শ্রেণিকক্ষের অভাবে ঝড়-বৃষ্টি ও শীত উপেক্ষা করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।আমি একাধিকবার কাজের তদারকীর দায়িত্বে থাকা উপজেলার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী কার্যালয়ে গিয়ে এ বিষয়ে অবহিত করেছি।তার পরেও রহস্যজনক কারণে কাজের কোনও অগ্রগতি হয়নি।বিষয়টি সকলেই অবগত আছেন।

বিদ্যালয়ের সভাপতি আবুল বাশার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঠিকাদার মিজানকে অনেকবার বলা হয়েছে।তিনি কথা শোনেন না।অথচ দোতলা কাজের বরাদ্দের সাথে বিদ্যালয়ের নিচতলা ও দোতলায় ওয়াসরুম নির্মাণকাজের বরাদ্দ হলে অন্য ঠিকাদার এ কাজ অনেক আগেই কাজ সম্পন্ন করে চলে গেছেন।অথচ মিজান কাজ না করায় আমরা নিচতলায় কার্যক্রম চালাতে পারছিনা।বাধ্য হয়েই আমাদের পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসাতে হচ্ছে।

ঠিকাদার মো. মিজান শেখের কাছে এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি তার (০১৭১৫৬৬৭৭০৬) এই নাম্বারের মোবাইল ফোনটি রিসিভ করেননি।

শ্রীনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মতিন জানান, এ বিষয়ে আমি মাসিক সভার মাধ্যমে উপস্থাপন করেছি।বিদ্যালয়ের কাজ সম্পন্ন না হওয়ার ফলে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।আমার অবাক লাগে উনি কোন খুঁটির জোরে এতো গুলো কাজ ফেলে রাখছে।

শ্রীনগর উপজেলা প্রকৌশলী মহিফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একমাস হয় এখানে এসেছি। এসেই ঠিকাদার মিজানকে নিয়ে খোদাই বাড়ি বিদ্যালয় পরিদর্শন করে এসেছি।তাকে কাজের জন্য বার বার তাগিদ দিচ্ছি।খোদাই বাড়িসহ কয়েকটি বিদ্যালয়ের কাজে তার কোন অগ্রগতি পাচ্ছিনা।আমি তাকে নিয়ে চিন্তিত আছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারী জানান, বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি।দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মতামত লিখুন :