শ্রীনগরে ৩ বছরেও রাস্তার কাজ সম্পন্ন হয়নি! হাজারো মানুষের ভোগান্তি

শ্রীনগর উপজেলার কুকুটিয়া ইউনিয়নে একটি এলজিইডি রাস্তার সংস্কার কাজে ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও কাজ সম্পন্ন হয়নি! এতে করে ওই অঞ্চলের প্রায় ৪০-৫০ হাজার মানুষের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।বেহাল রাস্তার কারণে শত শত কৃষক আলু হিমাগারে সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ নিয়ে বিপাকে পরেছেন। বিবন্দী- পাঁচলদিয়া-কাজীপাড়া নামে অত্র এলাকায় পরিচিত প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার কাজের জন্য খোড়াখুড়ি শুরু করে মেসার্স মিজান এন্ড ব্রাদাস ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মো. মিজান। কাজের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও পূনরায় মিজান কাজের সময়সীমা বাড়িয়ে নিয়েও কাজ বন্ধ রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণেই ঠিকাদার মিজান এমনটা করতে সাহস পাচ্ছেন। রাস্তাটি শ্রীনগর উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী লৌহজং উপজেলার সংযোগ সড়ক হওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের চলাচল রয়েছে এই রাস্তায়। বেশ কয়েকবছর যাবত নাজুক রাস্তায় ভোগান্তির কারণে অত্র এলাকাবাসী অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন।
সরজমিনে দেখা গেছে, বিবন্দী বাজারের পূর্ব পাশে সাবেক মেম্বার আবুল হোসেন মোল্লার বাড়ির পুকুর পাড় থেকে পাঁচলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ে লৌহজং কলেজের উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম সিকদারের বাড়ি সংলগ্ন পাকা সড়ক পর্যন্ত কাঁচা রাস্তাটি পাকাকরণের নামে খোড়াখুড়ি করে ফেলে গত ৩ মাস যাবত কাজ বন্ধ রাখে মিজান। পুরো রাস্তা জুড়ে ইট ও সুরকী যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়েছে। এঅবস্থায় যানবাহন তো দূরের কথা মানুষের পাঁয়ে হাটা চলাফেরা করাই মুশকিল হয়ে পরেছে।
জানা গেছে, শ্রীনগরের বিবন্দী, বনগাঁও, মুসলিমপাড়া, দত্তগাঁও, পাঁচলদিয়া, জুরাসার, রানা, সিন্দুরদী, টুনিয়ামান্দ্রা, খোদাইবাড়ি ও লৌহজংয়ের বৌলতলী, দক্ষিণ চারিগাঁও এবং কাজীপাড়া গ্রামের প্রায় ৪০/৫০ হাজার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম রাস্তা এটি। কুকুটিয়া এলাকার ১০টি গ্রামের কৃষিপণ্য আনা নেয়ার ক্ষেত্রে রাস্তাটি অতিগুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান পরিস্থিতিতে এখানকার কৃষকরা হাজার হাজার মণ আলু নিয়ে বিপাকে পরেছেন। কারণ হিসেবে জানা গেছে, তারা এখন হিমাগারে আলু পাঠাতে পারছেন না। আলু সংরক্ষণ করতে বিকল্প রাস্তায় কৃষকের অতিরিক্ত কেরিং খরচ গুনতে হচ্ছে। এছাড়াও পাইকাররা বেহাল রাস্তার অজুহাতে কৃষকের আলুর ন্যায্য দাম দিতে চাচ্ছেন না। বাধ্য হয়েই প্রতি মন আলু বাজার দরের চেয়ে ৫০/৬০ টাকা কমে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। এমনটাই জানান স্থানীয় ভূক্তভোগী অনেক কৃষক।
অপর একটি সূত্রে জানা যায়, শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম কাননের ছোট ভাই মো. মিজান রাস্তায় কচ্ছপ গতিতে কাজ করেও পার পাচ্ছেন। উপজেলা এলজিইডি অফিসের সংশ্লিষ্টরা এবিষয়ে অনেকটাই উদাসীন। জানা যায়, এর আগেও এই রাস্তা সংস্কারে অনিয়ম করে ঠিকাদার মিজান। এনিয়ে শ্রীনগর উপজেলা পরিষদের এক জনপ্রতিনিধি সরেজমিনে মিজানের অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরেন। এছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা নানা ভাবে দ্রæত রাস্তার কাজ সম্পন্ন করার তাগিদ দিলেও কোন কাজ হয়নি। এতে করে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে মিজানের খুঁটির জোড় কোথায়? জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করেন এলাকাবাসী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ঠিকাদার মিজান রাস্তা খোড়াখুড়ি শুরু করে। গত ২৪/০৯/২০১৯ তারিখে কাজের মেয়াদকাল শেষ হলেও পূনরায় আগামী ০২/০৯/২০২১ তারিখ পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে নেন। এর মধ্যে ওই রাস্তার কাজে কোনও অগ্রগতি না থাকায় উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী অফিস ৫ বার ও জেলা এক্সচেঞ্জ থেকে ১ বার তাগিদ জানিয়ে চিঠি প্রদান করে। অপরদিকে ঢাকার পিডি অফিস থেকেও কাজের অগ্রগতি সমন্ধে রাস্তা পরিদর্শন করা হয়। কাজের
তদারকীর দায়িত্বে রয়েছেন সহকারী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান।
এবিষয়ে জানতে শ্রীনগর উপজেলা এলজিইডি অফিসে গিয়ে প্রধান প্রকৌশলী মো. রাজিউল্লাহ’র সাক্ষাত পাওয়া যায়নি।
এব্যাপারে সহকারী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান জানান, আমি এখানে নতুন এসেছি। ঠিকাদার কাজ না করার বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি দিয়েছি।
ঠিকাদার মো. মিজান শেখের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন সমস্যার কারণে রাস্তার কাজ করতে পারছিনা। এখন লকডাউন ও রমজান মাসের কারণে শ্রমিক পাচ্ছিনা। রমজানের পরে রাস্তার কাজ শুরু করবো।