শ্রীনগরে বীরতারা ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি প্রদীপের নানা অপকর্ম!

শ্রীনগর উপজেলার বীরতারা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য প্রদীপ মন্ডলের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় একটি সরকারি বিদ্যালয়ের পুকুর বিক্রির টাকা আত্মসাৎ, সরকারি রাস্তায় বেড়া দিয়ে প্রতিবেশীদের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া, নারী কেলেংকারিসহ দলীয় প্রভাব খাটিয়ে স্বার্থ হাসিলের অভিযোগ রয়েছে প্রদীপের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠায় উপজেলা যুবলীগ ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।যুবলীগ সভাপতি প্রদীপ মন্ডল (৪৮) সাতগাঁও গ্রামের মৃত রাম লাল মন্ডলের ছেলে। সে ৩ সন্তানের জনক।
স্থানীয়রা জানায়, সাতগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পুকুর বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে প্রদীপ মন্ডল।এছাড়াও একই বিদ্যালয়ের কয়েকটি গাছ বিক্রির টাকাও সে হজম করেছে। একই গ্রামের ঋৃষি পাড়ার তপন নামে এক প্রবাসীর স্ত্রী ৪ সন্তানের জননী সীমা রানী দাসের (৩৮) সাথে প্রদীপের পরকিয়া সম্পর্ক রয়েছে। পরকিয়ার টানে গত ২৪ আগস্ট রাতে তপনের শশুর বাড়ি নবাবগঞ্জের আগলা এলাকায় সীমার সাথে দেখা করতে গিয়ে এলাকবাসীর কাছে আটক হয় প্রদীপ। এ সময় এলাকবাসী প্রদীপকে উত্তম মাধ্যম দিয়ে আগলা পুলিশ ফাড়িতে সোর্পদ করে।
এ ঘটনায় গত ২৫/২৬ আগস্ট বিভিন্ন দৈনিক পত্র পত্রিকাসহ অনলাইন পোর্টালে সংবাদের শিরোনাম হয়। এর আগেও সাতগাঁও তপনের বাড়িতে সীমা রানীর সাথে রাতে দেখা করতে গিয়ে পাড়া প্রতিবেশীরা প্রদীপকে ঘরে আটকের চেষ্টা করলে কৌসলে প্রদীপ পালিয়ে যায়। পরে প্রতিবেশীরা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে প্রদীপের কু-কর্মের বিষয়ে অভিযোগও করেন জানান তারা।সরেজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, যুবলীগ সভাপতি ও সাবেকইউপি সদস্য প্রদীপ মন্ডল সাতগাঁও সরকারি প্রাধমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি থাকাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ে পুকুর বিক্রির টাকা ফান্ডে জমা দেননি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে ২টি গাছ বিক্রির টাকা না দেয়ার অভিযোগও উঠে।
আরো জানা যায়, গত ৬/৭ মাস আগে প্রদীপ মন্ডল দলীয় প্রভাব খাটিয়ে একটি সরকারি রাস্তায় প্রতিবেশীদের যাতায়াত বন্ধ করে দেয়। এনিয়ে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা কাটাকাটি হলে প্রদীপসহ তার ছোট ভাই প্রতিবেশীদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে প্রদীপ প্রায় ১১ দিন জেল খাটে। জামিনে এসে প্রদীপ স্থানীয়ভাবে তা মিমাংসা করে। দলীয়নেতাকর্মীরা প্রদীপের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ এনে যুবলীগ থেকে তাকে বহিস্কারের দাবী করেন। এর আগে দুবাই প্রবাসী তপনের স্ত্রী সীমা রানীর সাথে প্রদীপের পরকিয়ার ঘটনায় আটকের বিষয়ে বীরতারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাব্বির শেখ ও স্থানীয় বাসিন্দা নান্টু ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কাশেম বলেন, বিদ্যালয়ের পুকুর বিক্রির ৩০ হাজার টাকা প্রদীপ দেয়নি।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছিলাম। এছাড়াও স্কুলের গাছ কাটার বিষয়টি আমি শুনেছি। প্রদীপের পরকিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নারী কেলেংকারির ঘটনায় প্রদীপকে আটকের ঘটনা কে না জানে? গৃহবধূ সীমা রানী দাসের কাছে জানতে সাতগাঁও ঋৃষি পাড়ায় তার স্বামীর বাড়িতে গিয়ে তার স্বাক্ষাত পাওয়া যায়নি। জানা যায় সীমা রানী দাস নবাবগঞ্জে তার বাবার বাড়িতে আছেন।
এব্যাপরে বীরতারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজিম খানের কাছে প্রদীপের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রদীপের বিষয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, প্রদীপ মন্ডল পুকুর বিক্রির কোনও টাকা স্কুল ফান্ডে জমা দেননি। ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি প্রদীপ মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি কোনও কথা বলতে রাজি হননি।
শ্রীনগর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ফিরোজ আল মামুনের কাছে প্রদীপের নারী কেলেংকারির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঘটনাটি আমি লোকমুখে শুনেছি। এঘটনায় দলীয় ভাবে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টে প্রদীপ দোষী সাব্যস্ত হলে জেলা কমিটির মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।