শ্রীনগরে ফসলী জমির উর্বর মাটি কাটার অভিযোগ!

শ্রীনগর উপজেলার বাঘড়া ইউনিয়নের ছত্রভোগ-জাহানাবাদ এলাকায় ফসলী জমির উর্বর মাটি কাটা হচ্ছে। একটি প্রভাবশালী মাটি খোর সিন্ডিকেট আড়িয়াল বিলে বিভিন্ন পয়েন্টে যত্রতত্রভাবে শতশত কৃষি জমি মাটি কেটে বিক্রি করছে। বিক্রিকৃত মাটিবহণের জন্য সড়কে নিষিদ্ধ ট্রলির ব্যবহার করা হচ্ছে। মাটি ভর্তি মাহিন্দ্রা ট্রলির ওভারলোডিংয়ে গ্রামীন রাস্তাঘাট সব বেহাল হচ্ছে। এতে করে বেহাল রাস্তায় ধুলোবালির কারণে হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সাইনপুর এলাকার চঞ্চল ভূইয়া, বাঘড়া এলাকার ছত্রভোগের জলিল, নুর মোহাম্মদ, কামাল, মোজাম্মেল চৌধুরী, কানা শহিদ, কালাচাঁন, আনিছ মাঝি ওরফে হানিফা, রতন, জুবরাজ শেখ, শামীম মৃধা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এসব ফসলী জমির মাটি কাটার অভিযোগ উঠেছে। প্রভাবশালী মাটি সিন্ডিকেটের ভয়ে ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। প্রতি ট্রলি মাটি বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। বিলের মাটি বিক্রি করে বছরের কোটি টাকার বাণিজ্য করছে সিন্ডিকেটটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঘড়া ইউনিয়নের ছত্রভোগ-জাহানাবাদ সড়ক এলাকার আড়িয়াল বিলে স্ক্যাভেটর দিয়ে ফসলী জমির মাটি কাটা হচ্ছে। মাটি কেটে বিলের বিভিন্ন স্থানে বিশাল স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। আবাদি ধানি জমিগুলো ব্যাপক ক্ষতিসাধন হচ্ছে। বির্স্তীণ বিলে মাটি কাটার কাজে বিভিন্ন পয়েন্টে ৪-৫টি স্ক্যাভেট/ভেকু দেখা যায়। এসব মাটিবহণের কাজে প্রায় ৩০টি ট্রলির ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব ট্রলির ওভারলোডিংয়ে ছত্রভোগ-জাহানাবাদ পাকা সড়ক, নিচ্ছিমপুর কাঁচা রাস্তা ভেঙেচুরে বেহাল হয়ে পড়ছে। জানা যায়, বিলে স্তুপ করা মাটি বর্ষা মৌসুমে ট্রলার ও বাল্কহেডে করে পাঠানো হবে বিভিন্ন ইট ভাটায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন কৃষক বলেন, মাটি কাটার ফলে পার্শ্ববর্তী ফসলীগুলো মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। মাহিন্দ্রা ও ভেকু চলাচলের কারণে বিলের অসংখ্য ধানি জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। প্রভাবশালী মাটি সিন্ডিকের ভয়ে তারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে সাহস পান না।
এলাকাবাসী জানায়, ট্রলির কারণে এখানকার রাস্তাগুলো বেহাল করা হচ্ছে। ট্রলির মাটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রাস্তাজুড়ে ধুলোবালির সৃষ্টি হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মাটি সিন্ডিকেটকেটকে এসব অবৈধ কাজ বন্ধ রাখতে বলেছিলেন। এর পর থেকে সিন্ডিকেটটি আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
মাটি সিন্ডিকেটের সদস্য চঞ্চল ভূঁইয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি মাটি কাটার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিলের জমিতে মাটি কাটার কাজে আমার একটি ভেকু ও ১০টি মাহিন্দ্রা ট্রলি আছে। এখন কাজ বন্ধ আছে। আব্দুল জলিলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মাটি কাটি না। কেউ যদি মাটি বিক্রি করে তাহলে আমি কিনি। নিজের প্রয়োজনে রতন ও নুর মোহাম্মদের কাছ থেকে মাটি কিনেছি। এ বিষয়ে মোজাম্মেল চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখর এই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি। সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা মাটি কাটার বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
বাঘড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আল নাসের তানজিল বলেন, ফসলী জমির টপসয়েল কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। অসহায় কৃষক ভয়ে কিছু বলতে পারছেন না। মাটির ট্রলি দিয়ে গ্রামীর রাস্তাঘাট সব বেহাল করা হচ্ছে। সিন্ডিকেটের সদস্যদের নিষেধ করা হয়েছিল। এ কথায় কোন লাভ হয়নি। ফসলী জমি ও রাস্তাঘাট রক্ষায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
বাঘড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ সহকারী মো. আল-আমিনের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।