শ্রীনগরে খাল পুনঃখনন কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

শ্রীনগর উপজেলার কুকুটিয়া ইউনিয়নে নাগরভোগ খাল পুনঃখনন কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) মুন্সীগঞ্জ জেলার ভূ-পরিস্থি পানি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৮ লাখ ৫৯ হাজার ২০০ টাকা বরাদ্দকৃত কাজে নাগরভোগ ১ হাজার মিটার খাল পুনঃখনন কাজে মেসার্স ব্র্যান্ড ম্যায়ো কমিউনিকেশন নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এখানে মাটির পরিমান ধরা হয়েছে ১০.১০০ ঘন মিটার। লোক দেখানো নামেমাত্র খাল পুনঃখনন কাজে এখানে ব্যাপক অনিয়ন করা হয়েছে। এ কাজের অনিয়মে বিষয়ে কুকুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেন কুকুটিয়া ইউপি সচিব মো. ইদ্রীস আলী শেখ। তিনি বলেন এবিষয়ে সংশিষ্টগণ কোন তথ্য দিতে চাইছেন না।
সরেজমিনে দেখা যায়, নাগরভোগ গ্রামের আজিজের বাড়ির সামনে থেকে সুরুদীয়া পর্যন্ত খালটির অনেকাংশে খনন কাজ করা হয়নি। এছাড়াও কোথাও কোথাও খনন কাজে খালের গভীরতা ও প্রস্থ ঠিক নেই। স্কেভেটর মেশিনে (ভেকু) যত্রতত্রভাবে মাটি কেটে অনেক কৃষিজমি বেহাল করা হয়েছে। কাজে লোক দেখানো মাত্র মাটি কাটা হয়েছে।
স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুল সামাদ, মোক্তার হোসেন, হাকিম দর্জিসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, আমরা জানি মাটি কেটে খালের এক পাশে উঠানো হবে। কিন্ত ঠিকাদার কাটা মাটি খালের দুই পাশে উঠায়। এতে করে আবাদি কৃষি জমির ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও পুরো খাল পাড়ের জমিগুলো ইতিমধ্যেই ভাঙ্গণের কবলে পড়েছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, একই ইউনিয়নের খোদাইবাড়ি-কাজীপাড়া নামক খালে আলাদাভাবে মেসার্স সিএসবি এন্টারপ্রাইজ (৮,৮৯,৮৬৩ টাকা) ও মেসার্স হা-মিম বিল্ডর্স (৮,৭১,৮৯৭ টাকা) নামে অপর দুই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোট ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৬০ টাকা বরাদ্দে প্রায় ১২’শত মিটার খাল পুনঃখনন করে। এখানেও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে খনন কাজে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আরো জানা যায়, কুকুটিয়া ইউনিয়নের খালগুলো পুনঃখননের কাজের জন্য মুলত দুলাল নামে একজন ঠিকাদারই খনন কাজ করছে।
জানা গেছে, কাগজপত্রে কাজের তদারকীর দায়িত্বে রয়েছেন মুন্সীগঞ্জের (ক্ষুদ্র সেচ) বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী রুহুল আমিন। তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি এখন অন্যত্র বদলী হয়ে গেছেন। প্রকৌশলী রুহুল আমিন বলেন, এটার তদারকীর দায়িত্বে আছেন সোহান মোল্লা নামে একজন উপ-প্রকৌশলী। এ বিষয়ে শ্রীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শান্তনা রানী জানান, কাজে অনিয়মের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। কোনও লিখিত অভিযোগ পাননি। তিনি খাল পুনঃখনন কমিটির সদস্য। বিএডিসি খনন কাজের তদারকী করছে। স্থানীয় কৃষি অফিস এবিষয়ে সুনিদিষ্ট কোনও তথ্য জানাতে পারেনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আনজাম মাসুদ লিটনের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সত্য পরিপূর্ণভাবে খালটির পুনঃখননের কাজ হয়নি।
ঠিকাদার দুলালের কাছে খাল পুনঃখনন কাজে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাগরভোগ খালটি পুনঃখননে কিছুটা ভুলক্রুটি থাকতে পারে। তবে তিনি দাবী করেন, খোদাইবাড়ি খালটি পুনঃখনন কাজে কোনও অনিয়ম হয়নি। এখানে নিয়ম অনুসাওে কাজ হয়েছে।
এ ব্যাপারে শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণব কুমার ঘোষ জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে সর্বশেষ সভায় এবিষয়ে তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। এখনও কোনও তথ্য জানা যায়নি। বিএডিসির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এবিষয়ে জানানো হবে।