শ্রীনগরে করোনায় মৃৎশিল্পীদের স্বপ্ন ভঙ্গ

আরিফুল ইসলাম শ্যামল
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৮:১৩ PM, ১৭ এপ্রিল ২০২১

করোনা মোকাবেলায় দ্বিতীয় ধাপে দেশে চলছে কঠোর লকডাউন। করোনার সার্বিক পরিস্থিতিতে গত বছর থেকেই মানুষের মধ্যে বৈশাখীর আমেজ নেই। কোথাও নেই বৈশাখী গোলিয়া বা মেলার উৎসব। নিষেধাজ্ঞা থাকায় কোথাও কোনও বৈশাখী উদযাপন হতে দেখা যায়নি। করোনার দ্বিতীয় ধাপের লকডাউনেও সব স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে মৃৎশিল্পীদের। পরিবারগুলো করোনায় সম্পূর্ণ কর্মহীন হয়ে পরেন। প্রায় অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার তন্তর ইউনিয়নের শ্রীনগর-নওপাড়া সড়ক সংলগ্ন তন্তর পাল বাড়ি ঘুরে মৃৎশিল্পীদের চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাঁপ লক্ষ্য করা গেছে সরেজমিনে দেখা যায়, এখানকার পাল বাড়িতে মোট ৪টি পরিবারের বসবাস। করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন পরিবারগুলো এখন হাজার হাজার মাটির তৈরী সামগ্রী নিয়ে বিপাকে পরেছেন। বৈশাখী মেলায় এসব সামগ্রী বিক্রির জন্য আশায় বুক বেঁধে ছিলেন। তবে লকডাউনে তাদের সব স্বপ্ন ভেস্তে যায়। দেখা গেছে, তৈরীকৃত নৌকা, ঘোড়া, গরু, হাঁস, মুরগি, পুতুল, ব্যাংক, হাড়ি-পাতিল, কলশ, মটকি, বাশন-খোরাসহ নানা ধরনের মাটির সামগ্রী বসতঘরে স্তুপ করে রাখা পাশাপাশি বস্তাবন্দি করছেন। নি¤œআয়ের কর্মহীন পরিবারগুলো বেকার সময় কাটাচ্ছেন। আয় রুজীর পথ বন্ধ থাকায় খাবার যোগানের কোন মাধ্যমও নেই তাদের। তাই প্রায় সময়ই অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। আধুনিকযুগে নানা বাঁধা উপেক্ষা করে পূর্ব পুরুষের আড়াইশত বছরের পুরোনো পেশাটি এখনও তারা ধরে রেখেছেন তারা। জানা গেছে, বাব-দাদার সূত্রেই সমু পাল (৬২) ও সমীর পাল (৫৮) সহ মোট ৪টি পরিবার এখানে ঐতিহ্যবাহী মাটির বিভিন্ন সামগ্রী তৈরী করে আসছেন। গত বছর থেকে এই পর্যন্ত করোনার কারণে পরিবারগুলোর তেমন কোনও আয় রুজী হয়নি। এবার বৈশাখী মেলা ও গোলিয়াকে সামনে রেখে পরিবারগুলো ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল। এরই মধ্যে করোনা দ্বিতীয় ধাপের লকডাউনে তাদের স্বপ্ন সব শেষ হয়েছে। পরিবারগুলো দুশ্চিন্তার মধ্যে জীবনযাপন করছেন। ঘরে আটকা পরেছে তৈরীকৃত বড় ছোট ৫ হাজারের অধীক বিভিন্ন মাটির সামগ্রী। বাধ্য হয়েই বসতঘরে স্তুপ করে রাখার পাশাপাশি এগুলো এখন বস্তা বন্দি করে রাখছেন তারা। এসব মাটির সামগ্রী বিক্রি করতে না পেরে পরিবারগুলো এখন আর্থিক সংকটের পাশাপাশি খাবার সংকটে পরেছেন। বৃদ্ধ সমু পালের সংসারে ৪ কন্যা ও সমীর পালের ৫ কন্যা সন্তান থাকলেও তাদের সংসারে কোন পুত্র সন্তান নেই। তাই বিকল্প আয়ের কোনও মাধ্যমও নেই।

এছাড়াও উপজেলার হাঁসাড়া, শ্রীনগর সদর এলাকার বটতলা, ষোলঘরে প্রায় ৩০/৪০টি পাল পরিবার এখন কর্মহীন হয়ে পরার খবর পাওয়া গেছে। এসময় মৃৎশিল্পী সমু পাল বলেন, করোনাকালীন সময়ে গত বছর বৈশাখীতে কোন ব্যবসা-বাণিজ্য হয়নি। গেল বছরের লোকসান কাটিয়ে উঠছে এবছর মাটির অনেক জিনিসপত্র তৈরী করি। করোনায় সব আশা-স্বপ্ন ভেস্তে গেছে। তিনি এখন পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলেন তিনি। সমু পালের কন্যা ৯ম শ্রেণির ছাত্রী সুফলা পাল (১৪) বলেন, ঘরে জায়গা নেই। তাই এসব মাটির সামগ্রী এখন বস্তায় ভরে রাখার চেষ্টা করছি। সমীর পাল বলেন, গত বছর সরকারিভাবে কিছু সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছি। এবছর এখনও কোনও সহযোগিতা আসেনি। করোনায় তাদের স্বপ্নে ভাটা পরেছে। করোনার সার্বিক পরিস্থিতিতে বড় সংসার নিয়ে খুব বেকায়দায় পরার কথা জানান তিনি। তন্তরের স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল কুদ্দুস শেখ জানান, এই পরিস্থিতিতে পাল পরিবারগুলোর খুবই খারাপ অবস্থা যাচ্ছে। গেল লকডাউনে তাদের কিছুটা সহযোগিতা করা হয়েছিল। এবারও তাদের সাদ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করা হবে।

এব্যাপারে শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণব কুমার ঘোষকে অবহিত করা হলে তিনি পাল পরিবারগুলোকে সাহায্য সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

আপনার মতামত লিখুন :