শ্রীনগরে আলু নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

আরিফুল ইসলাম শ্যামল
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৮:৪৩ PM, ০২ এপ্রিল ২০২১

জমি থেকে আলু উত্তোলণের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। ভালদামে বিক্রির আশায় মাথায় দুশ্চিন্তা নিয়ে এসব আলু সংরক্ষণ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার কৃষক। বর্তমান পাইকারী বাজারে আলুর দাম নিয়ে কৃষক অনেকটাই হতাশায় আছেন। এই অঞ্চলে পাইকাররা প্রতি মন আলুর দাম হাকাচ্ছেন ৪৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা করে। তাই আলুর ন্যার্য দাম পাওয়ার লক্ষ্যে জমি থেকে এসব আলু উত্তোলণ করে বাড়ির গোলাঘরে কিংবা নিকটতম হিমাগারগুলোতে সংরক্ষণ করছেন তারা। এরই মধ্যে স্থানীয় হিমাগারগুলোতে আলুর ধারণ ক্ষমতার বাহিরে চলে গেছে। এমনটাই লক্ষ্য করা গেছে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বীরতারা, আটপাড়া ও তন্তরে এলাকায় আলু উত্তোলণের কাজ শেষের দিকে। এছাড়া কুকুটিয়া এলাকায় পুরোদমে আলু উত্তোলণ চলছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এখানেও সব আলু উঠনোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। দেখা গেছে, এখানে অনেক কৃষক বাড়ির গোলাঘরে আলু এনে রাখছেন। এছাড়াও জমি থেকেই অনেকে সংরক্ষণের জন্য এসব আলু বস্তাবন্দি করে হিমাগারে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু শ্রীনগর চকবাজারে ১টি, আটপাড়ায় ১টি ও তন্তরের সোন্ধারদিয়ায় ১টি হিমাগার ইতিমধ্যেই আলুতে ঠাসা। এছাড়াও শ্রীনগরের পূর্বাঞ্চলের অনেক কৃষক পার্শ্ববর্তী লৌহজং উপজেলার হাট নওপাড়া বাজার এলাকার উদায়ন হিমাগার ও নওপাড়া কোল্ডষ্টোরে আলু রাখার চেষ্টা করছেন। দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাটে খোলা আকাশের নিচে ও হিমাগারগুলোর আশপাশে অনেক বস্তাবন্দি আলু পরে আছে।

স্থানীয় কৃষকরা আলুতে লাভের আশায় সংরক্ষণ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, শ্রীনগরের ১৪টি ইউনিয়নে কমবেশী আলুর চাষাবাদ হলেও বীরতারা, তন্তর, আটপাড়া ও কুকুটিয়া ইউনিয়নে কৃষকরা বিস্তীর্ণ জমিতে আলুর চাষ করেছেন। উপজেলায় এবছর আলুর চাষ করা হয়েছে ২৩’শ হেক্টর অধিক জমিতে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এখানকার কৃষককে বাধ্য হয়ে পাইকারীভাবে প্রতি মন আলু বিক্রি করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায়। ১ কানিতে (১৪০ শতাংশ) আলুর ফলন হয়েছে সাড়ে ৩০০ মন থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ মন পর্যন্ত। এচাষে সার্বিক খরচ হিসেব করলে জমিতেই প্রতি মন আলুর দাম পরেছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। বর্তমান বাজার দরে আলু বিক্রি করা হলে লোকসানের মুখে পরতে হচ্ছে কৃষকের।অপরদিকে প্রতি ৫০ কেজি ওজনের ১ বস্তা আলু হিমাগারে সংরক্ষণের জন্য কৃষকের খরচ পরছে প্রায় ৩০০ টাকা। এর মধ্যে প্রতি বস্তার দাম ৪৮-৫০ টাকা, কেরিং খরচ (দূরত্ব ভেদে) সর্বনি¤œ প্রায় ৫০ ও হিমাগার ফি প্রতি বস্তায় ২০০ টাকা। তবে হিমাগার ফি অগ্রিম প্রদান করা হলে প্রতি বস্তায় ৫০ টাকা কম রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বীরতারা এলাকার মো. আদিল নামে এক কৃষক বলেন, আলু উঠানো শেষ। আলুর দাম কম তাই আলু বাড়িতে গোলাঘরে রেখেছি। যদি কিছুটা দাম বাড়ে তাহলে বিক্রি করে দিবো। আজই প্রথম জমিতে আলু তোলা শুরু করছেন। কুকুটিয়া এলাকার কৃষক মো. আলম মোল্লা বলেন, তিনি এবার প্রায় ১৫ কানি জমিতে আলু চাষ করেছেন। সব হিসেব করলে প্রতি কানিতে আলু চাষে তার খরচ হয়ে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। কানিতে ফলন হয়েছে আনুমানিক সাড়ে ৩০০ মন আলু। সেই হিসেবে জমিতেই প্রতি মন আলু দাম পরেছে প্রায় সাড়ে ৬ টাকা। তিনি বলেন, এখন আলু বিক্রি না করে হিমাগারে রাখার চেষ্টা করছি। এখানকার হিমাগার গুলোতেও এখন আলু রাখারজায়গা নেই।

আপনার মতামত লিখুন :