শ্রীনগরের ভাগ্যকুলে জাল বুনে চলে তাদের সংসার

আরিফুল ইসলাম শ্যামল
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০১:৫৯ PM, ২৪ মার্চ ২০২১

সুতা দিয়ে জাল বুনে সংসার চালাচ্ছেন শ্রীনগরের নারীরা। সাংসারিক কাজকর্মের পাশাপাশি সুযোগ পেলেই বসতে হচ্ছে জাল তৈরীর কাজে। ঘন্টার পর ঘন্টা নিপুন হাতের ছোঁয়ায় একটি একটি করে সুতায় তৈরী করা হচ্ছে জালের খোপ। দেখতে অনেকটাই মাছ ধরার জালের মত হলেও এসব জাল বহুতল ভবন নির্মাণ কাজের নিরাপত্তায় ও বিভিন্ন কাজকর্মে ব্যবহার করা হয়। পরিবারের নারী ও পুরুষ সুযোগ পেলেই এসব জাল বুননোর কাজে বসছেন।

এমন চিত্রই লক্ষ্য করা গেছে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল এলাকার ঐতিহ্যবাহী হরেন্দ্র লাল স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন জেলে পল্লীতে। গত বছর থেকেই করোনা মোকাবেলায় কর্মহীন পরিবারগুলো অনেকাটাই মানবেতর জীবন যাপন করেছেন। করোনার দ্বিতীয় ধাপ মোকাবেলা আশঙ্কায় পরিবারগুলো এখন ফের দুশ্চিন্তার মধ্যে পরেছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, এখানে প্রায় বেশ কয়েকটি পরিবারের বেশীর ভাগ নারীরা সাদা রংয়ের নায়লন সুতা দিয়ে জাল বুননোর কাজ করছেন। আদি যুগের কৌশল ব্যবহার করেই হাতে তৈরী করা হচ্ছে এসব জাল।

দেখা গেছে, ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি পরিমানের একেকটি জালের খোপ করা হচ্ছে। সুতার জোড়ায় জোড়ায় একেকটি ন্যাটের দৈর্ঘ করা হচ্ছে প্রায় দেড় শতাধিক ফুটেরও অধিক। সুতার ওজন হিসেব অনুযায়ী একটি তৈরী জালের ওজন প্রায় ৩০/৪০ কেজি। বিশাল আকৃতির এসব জাল তৈরী অবস্থায়ই বস্তা বন্দি করে রাখা হচ্ছে। রেখা দাস নামে এক নারী বলেন, প্রতি ১ কেজি সুতা হিসেব অনুযায়ী জাল তৈরীর কাজে তিনি মজুরি পান ৫০ থেকে ৬০ টাকা। দৈনিক একটানা এই কাজ করতে পারলে ৫০০-৬০০ টাকা রুজী করা যায়। তবে সংসারের অন্যান্য কাজকর্মও করতে হয় তার। সংসারে স্বামীসহ ১ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তান রয়েছে। সন্তানরা লেখাপড়া করছেন। স্বামী পেশায় একজন কাঠ মিস্ত্রি। প্রায় ২০ বছর যাবত এই এলাকায় ভাড়া থাকছেন তারা। সংসারের বাড়তি আয়ের জন্যই ঘরে বসে জাল বুননোর কাজ করেন। সুযোগ পেলেই বসে পরেন কাজ করতে। তিনি আরো বলেন, গেল বছর করোনার প্রকোপে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে তাদের। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় তারা এখন দুশ্চিন্তায় পরছেন। এমনটাই জানান এখানকার বসতি পরিবারের নারী সদস্যরা। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, এখানে ১০/১২টি পরিবার ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। প্রতিমাসে ১৬শত’ করে টাকা ঘর ভাড়া দিচ্ছেন তারা। ভাগ্যকুল এলাকার সম্ভো সোনারোর বাড়িতে পরিবারগুলো ভাড়া থাকেন। কিছুটা বাড়তি আয় রুজীর জন্য এসব জাল তৈরীর কাজ করছেন তারা। সপ্তাহে ২/৩ নারায়ণগঞ্জ থেকে জাল তৈরীর যাবতীয় উপকরণ এখানে নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। যাওয়ার সময়ে এখান থেকে তৈরীকৃত এসব জাল নিয়ে যান তারা।

আপনার মতামত লিখুন :