লৌহজংয়ে মা ইলিশ ধরতে জেলেদের প্রস্তুতি সম্পন্ন, প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি থাকলেও অর্থাভাবে ভেস্তে যেতে পারে অভিযান

তাজুল ইসলাম রাকিব
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৯:৫৯ PM, ১৪ অক্টোবর ২০২০

আজ থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ রক্ষায় বন্ধ থাকবে সারাদেশসহ মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলা পদ্মা নদীতে ইলিশ ধরা। এই নিয়ে পদ্মা নদী সংলগ্ন উপজেলা গুলোতে ইলিশ ধরা বন্ধে চলছে প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি। সভা সমাবেশ, মাইকিং, অভিযান ও মোবাইল কোর্টসহ জেলেদের প্রনোদনার জন্য হচ্ছে আলোচনা। কিন্তু অর্থ সংকটে ভেস্তে যেতে পারে এই সব অভিযান। অপরদিকে বিগত দুই বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ইলিশ ধরা বন্ধের এই সময়টাতে ইলিশ ধরতে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলেরা। মাছ ধরার ট্রলার, নৌকা ও জাল চুন কালি ও তেল দিয়ে সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে তারা। জেলেদের মাঝে ইলিশ ধরতে এখন সাজ সাজ রব। তৈরী করা নতুন নতুন ট্রলার, নৌকা আর জাল। এক ধরনের ব্যস্ত সময় পার করেছে এখন জেলে পাড়ার জেলেরা।

সরজমিনে দেখা যায়, মা ইলিশ ধরার বন্ধের সময়টা যেন এই অঞ্চলের জেলেদের জন্য এক আর্শিবাদ। সরকার ঘোষিত ইলিশ ধরা বন্ধের সময় জেলেদের শুরু হয় উৎসব। কোন বাঁধা যেন এদেরকে আটকাতে পারেনা। প্রশাসন ও তাদেরকে কিছু করতে পারে না। গত দুই বছরে এ রকম উৎসব থেকে এবার তারা আরও জোরালোভাবে পদ্মায় ইলিশ ধরতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত বছর ইলিশ ধরা বন্ধের মৌসুমে লৌহজংসহ এর আশপাশের উপজেলায় পদ্মা নদীতে ছিলো ইলিশ ধরার মহা উৎসব। নদীতে জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। নদীর পাড়েই বসে ছিলো অস্থায়ী মাছের হাট। কিছু দুনীতিপরায়ন জেলে ইলিশ ধরেছেন নির্বিচারে। কিছু অসাধু লোকদের সহযোগিতায় জেলেরা অর্থের বিনিময়ে অসাধু কর্মকর্তা কর্মচরীদের ম্যানেজ করে অভিযানের খবর আগেই জেনে নিত। পরে অভিযানের সময় ইলিশ ধরা বন্ধ রাখে জেলেরা। ম্যাজিস্ট্রেট নদী থেকে চলে গেলে আবারও শুরু হয় ইলিশ ধরার উৎসব। তা ছাড়া নৌ-পুলিশ, থানা পুলিশ ও কোস্টগার্ডের বিরুদ্ধে ছিল ব্যাপক অভিযোগ। এদের কারো কারো বিশেষ টোকেনে প্রতিদিন নৌকা প্রতি নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে নদীতে চলেছে ইলিশ ধরা। অনেকটা খোলামেলা ভাবেই চলেছে ইলিশ নিধন। এমন কি মুন্সীগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা নিজে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে কোস্টগার্ডের তেমন সহযোগিতা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। এছাড়া নৌ-পুলিশের অভিযানে জেলেদের ধাওয়া খেয়ে গুলি করার ঘটনাও ঘটে এখানে। জেলেরা ছিল বেপরোয়া। পেশাদারী জেলেদের বাইরে ও নদীতে ইলিশ ধরতে নেমেছে অনেকেই। ছোট ছোট স্পিডবোর্ট দিয়েও স্কুল কলেজের ছেলেরা ইলিশ ধরেছে লৌহজংয়ের পদ্মায়। প্রশাসনের অভিযানে জেলেদের কলেজ পড়–য়া সন্তান ও আটক হয়েছে। তবে তার ভবিষ্যৎতের কথা বিবেচনায় রেখে তার জেল দেয়নি। এমনকি শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে সি-বোর্ট দিয়ে ও ইলিশ ধরার ঘটনা ঘটেছে। নদীর পাড়ে অস্থায়ী মৎস্য আড়ৎ থেকে কোটি কোটি টাকার ইলিশ বেচা কেনা হয়েছে। তবে এখানে ইলিশ সস্তা হওয়ায় পাইকারদের সাথে সাথে সাধারন আমজনতাও ইলিশ কিনতে ছুটে গেছে নদীর ধারে সেই অস্থায়ী মৎস্য আড়ৎতে। পুলিশ ও প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিতে এই সকল সাধারন জনতা বাচ্চাদের স্কুল ব্যাগ, মহিলাদের ভ্যানেটি ব্যাগ, লাগেজ, ভ্যাগেজ, বস্তাসহ নানা কিছুতে ভড়ে ইলিশ কিনেছে সস্থায়। তবে আবার অনেক জনতাকে ইলিশসহ আটক করে জেলের ভয় দেখিয়ে ইলিশ তো রেখেছেই সেই সঙ্গে ছেড়ে দেবার জন্য নিয়েছে টাকা। আবার জব্দ করা ইলিশ গেছে বরফ কলে ও তাদের স্বজনদের বাসায়। এমনি অভিযোগে গতবছর লৌহজং থেকে ডিএমপির দুই পুলিশ সদস্যকে লৌহজংয়ের গাওদিয়া থেকে আটক করে স্থানীয়জনতা। লৌহজং থানা পুলিশের কাছে হস্থান্তর করলে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। ইলিশ সস্থা দেখে ঢাকায় বসবাসরত শত শত মানুষ তাদের নিজেদের গাড়ি নিয়ে ছুটে গেছেন পদ্মা পাড়ে ইলিশ কিনতে। বস্তা ভড়ে ইলিশ কিনে ফিরেছেন ঢাকায়। কিন্তু ফিরতি পথে আবার অনেকে ইলিশ নিয়ে পড়েছেন বিপত্তিতে। ঢাকা-মাওয়া মহা সড়কের হাইওয়ে পুলিশের চেকপোস্টে পরে অর্থে বিনীময়ে ছেরে আসে।

লৌহজং উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. হুমায়ুন কবির জানান, এ বছর মা ইলিশ নিধন বন্ধে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবেনা জেলেদের। মা ইলিশ রক্ষায় সর্বাত্ত্বক চেষ্টা চালানো হবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অভিযানে ধরা পরলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সরাসরি জেলা দেয়া হবে। উপজেলার সব বরফ কলগুলো বন্ধ রাখা হবে। জেলেদের নৌকা গুলো প্রশাসনের জিম্বায় নেয়া হবে। জন সাধারনকে সচেতন করার জন্য মাইকিং করা হবে।

লৌহজং উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকতার্ মো. আসাদ্দুজ্জামান আসাদ জানান, গত বছর মৎস্য অভিযান পরিচালনার জন্য মাত্র ৫০ হাজার টাকা বরাদ্ধ পেয়েছিলাম। এ বছর তা বাড়িয়ে ৮০ হাজার টাকা করা হয়েছে। তবে পদ্মায় একটি অভিযান পরিচালনা করতে ১৫ হাজার টাকা দরকার হয়। তারপর মাইকিং, ব্যানারসহ প্রচার প্রচারনা তো রয়েছেই। তবে যথাযথ বরাদ্ধ না পেলে অভিযান চালানোটা কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

আপনার মতামত লিখুন :