মুন্সীগঞ্জে লোকসানে আলু চাষীরা

দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আলু উৎপাদন হয় মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরে। তবে চলতি মৌসুমে জেলায় আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এবার আশানুরূপ আগাম আলু চাষ হয়েছে। কিন্তু এবার আগাম আলুর দাম কম থাকায় লোকসানের কবলে পড়েছেন চাষিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার ২ হাজার ১০৪ হেক্টর কম জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। আবাদ মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ জমিতে দেরিতে আলুর চাষ হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন দেশের আলু উৎপাদনের শীর্ষ জেলার কৃষকরা।
এদিকে এবার আগাম আলুর দাম কম থাকায় লোকসানের কবলে পড়েছেন চাষিরা। গত বছর আলু চাষিরা প্রতি কেজি আলু মাঠেই বিক্রি করেছিলেন ২৫-৩০ টাকা দরে। এবার তা এক ধাক্কায় নেমে এসেছে ১০-১২ টাকায়। ফলে উৎপাদন খরচের সঙ্গে আলুর দামের বিস্তর ফারাক। অসময়ে বৃষ্টির কারণে আগাম আলুর উৎপাদনও কম হয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৭ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ৭৯৬ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৯ হাজার ৬৮০ হেক্টর, টঙ্গীবাড়ি ৯ হাজার ৫শ হেক্টর, শ্রীনগর ২ হাজার হেক্টর, সিরাজদিখান ৯ হাজার ১৫১ হেক্টর, লৌহজং ৩ হাজার ৩৬০ হেক্টর ও গজারিয়ায় ২ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। আবাদকৃত এসব জমিতে মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৯৩ টন নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী হেক্টর প্রতি ৩০ টনের কিছুটা বেশি আলু উৎপাদন হওয়ার কথা। আর লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে অনাবাদি রয়েছে ২ হাজার ১০৪ হেক্টর জমি। সে হিসাবে এসব জমিতে ৬৩ হাজার টন আলু উৎপাদন হওয়ার কথা থাকলেও জমি অনাবাদি থাকায় সেটি আর হচ্ছে না।
অন্যদিকে কৃষকরা জানান, নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আলু রোপণের উত্তম সময়। এ বছর আবাদ চলাকালে ঘূর্ণিঝড়ের পর বেশিরভাগ জমিতেই আলু আবাদ হয়েছে দেরিতে। বহু জমিতে বীজ নষ্ট হওয়ায় দ্বিতীয় দফা আবাদ করেননি অনেকে। এতে আবাদও হয়েছে কম জমিতে। ফলে আশানুরূপ ফলন হবে না বলেই ধরে রাখা যায়। এখন অনুকূল আবহাওয়া ও বাম্পার ফলন না হলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের উপায় নেই। এতে ক্ষতির মুখে পড়বে কৃষকরা।
অপরদিকে জেলার হিমাগারগুলোতে এখনো প্রচুর পরিমাণ আলু মজুদ রয়েছে। নতুন আলু উঠতে শুরু করায় দিন দিন কমছে পুরনো আলুর চাহিদা। ৪ টাকা কেজি দরে হিমাগারে আলু বিক্রি হচ্ছে তারপরও পাওয়া যাচ্ছে না ক্রেতা। দাম না থাকায় মালিকরা হিমাগারে আলু বিক্রি করতে আসছেন না। এতে বিপাকে পড়ছেন হিমাগার কর্তৃপক্ষ। কিছুদিনের মধ্যেই শীতল হাওয়া বন্ধ করে দিয়ে হিমাগার পুনরায় পরিষ্কার করে আগামী বছরের আলু সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। আলু বিক্রি করতে কেউ হিমাগারে না আসায় মজুদ আলু নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্টোর মালিকরা। হিমাগার মালিকরা বলছেন, আলু মালিকদের দলিলগুলো আমাদের দিয়ে গেলে আমরা নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে হলেও ভাড়ার টাকার আংশিক আদায় করতে পারতাম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা এ বি এম ওয়াহিদুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের সময় বৃষ্টির কারণে এ বছর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এক্ষেত্রে উৎপাদন নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে উত্তর বঙ্গে প্রচুর আলু উৎপাদন হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে দেশে আলুর ঘাটটি পড়বে না। তবে মুন্সীগঞ্জের কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আলুর পাশাপাশি সাথী ফসল ও অনাবাদি জমিতে বিকল্প ফসল হিসাবে ভুট্টা কিংবা অন্য ফসল আবাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, বৃষ্টিতে যেসব কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছে তাদের নামের তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে।