মুন্সীগঞ্জে রিকাবীবাজার খাল উদ্ধারে উদ্যোগ নেই

অস্তীত্ব হারাতে বসেছে মুন্সীগঞ্জ সদরের মিরকাদিম পৌরসভার ২০০ বছরের পুরনো রিকাবীবাজার খাল। ২০১৮ সাল থেকে শুরু করে কয়েক দফা দখল দূষণ মুক্ত করে খালটি খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। তারপরও সেই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি। আলোর মুখ দেখেনি কোনো উদ্যোগই। শুধু আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার। এটি প্রায় দুইশ বছরেরও বেশি পুরনো। ধলেশ্বরী নদীর কাঠপট্টি ঘাট থেকে এ খালের উৎপত্তি। মিরকাদিম পৌরসভার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ইছামতি নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এ খাল দিয়ে ‘প্রাচ্যের কলকাতা’ বলে পরিচিত কমলাঘাট নৌ-বন্দরে বড় বড় নৌকা দিয়ে মালামাল পরিবহন করা হতো। চলত লঞ্চও। এ খালের পানি একসময় স্থানীয়রা পান করত। গোসল করত লোকজন। রান্না-বান্নাসহ গৃহস্থলির সব ধরেণর কাজ করা যেত। বর্ষার সময় পানিতে থৈথৈ করত খাল। এখন সবই অতীত হয়ে গেছে। খালের বিভিন্ন যায়গা দখল হয়ে গেছে। প্রতিদিন পৌরসভা, বাজারের দোকান এবং বিভিন্ন মার্কেটের ময়লা আবর্জনা খালে ফেলা হচ্ছে। খালটি এখন তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে।
সরেজমিনে দেখাযায়,খালটি উপর কাঁচা- পাকা অন্তত ৮-৯ টি সাঁকো- সেতু রয়েছে। প্রতিটি সাঁকো- সেতুর দুইপাশসহ ১০-১৫ টি স্থানে ময়লার বিশাল বিশাল স্তুপ। সবচেয়ে বেশি রিকাবীবাজার খালের উপর জোড়া সেতুর নিচে ময়লার ভাগার। ধলেশ্বরী ও ইছামতি নদীর মুখ দুটিও নাব্যতা হারিয়ে শুকিয়ে আছে। খালটি ঘাস ও লতা পাতায় জটলা বেঁধে আছে দেখা গেছে। খালের দক্ষিণ পাশে যেসব দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোর পেছনের অংশ খাল ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে। উত্তর প্রান্তে খালে খুঁটি পুঁতে দখল করে তৈরি করা হয়েছে কাঠ ও আসবাবের দোকান।
মিরকাদিম পৌর খাল রক্ষা কমিটি সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে খালটি দখলমুক্ত ও পুন:খননের দাবীতে মানব বন্ধন, গণসাক্ষর সংগ্রহ, জেলা প্রসাশক বরাবর স্মারক লিপি প্রদান, খালের প্রান্তে অবস্থান ও প্রতিবাদ সভা সহ বহু কর্মসূচি পালন করা হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক খাল রক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন। বেশ কয়েকটি স্থাপনা উচ্ছেদও করেছিলেন। জেলা প্রশাসক এখান থেকে বদলি হয়ে যাওয়ার পর সে কাজ আর সামনে এগোয়নি। এরপর আবারো খালটি তার অস্তিত্ব হারাতে বসে।
রিকাবিবাজার পৌর খাল রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব এম এ রিন্টু জানান, দোকান ও স্থাপনা নির্মাণ করে খালটি দখল করে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা। বাজার, পৌরসভার সব এলাকার ময়লা বজ্য ফেলে খালটি ভরাট হয়েছে। অনেক আন্দোলন করেছি। প্রভাবশলীদের চোখরাঙানিতে পড়েছি। তার পরেও চেয়েছি, মৃত খালটি জীবন ফিরে পাক। প্রশাসন একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিল। অথচ খাল রক্ষায় তারা কোন উদ্যোগ নিল না।
রিকাবীবাজার ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার গোলজার হোসেন বলেন, বর্তমানে খালটি সম্পূর্ণ নাব্যতা হারিয়েছে। খালটির দুই পাশে মিরকাদিম পৌরসভা, বাজার কমিটি, পঞ্চযাত কমিটি, মসজিদ কমিটি, কয়েকটি সমিতি ও কয়েকজন ব্যক্তি অন্তত ২০-২৫টি স্থানে ময়লা ও মাটি ভরাট করে দখল করে নিয়েছে। আমরা তাদের তালিকা তৈরি করেছি। তিনি বলেন, যেহেতু এটি ঐতিহ্যবাহী খাল, তাই দখল উচ্ছেদ করে প্রশাসনের মাধ্যমে দ্রুত সীমানা নির্ধারণ করা দরকার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (ঢাকা বিভাগ) রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্ত্তী জানান, মুন্সীগঞ্জের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাল খননের ব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছেন তারা। এর মধ্য রিকাবিবাজার খালটিও রয়েছে। তবে বড় সমস্যা হচ্ছে দুপাশের দখল, খালের উৎসমুখ ও যে পথ দিয়ে পানি অপসারণ হবে সেগুলো বন্ধ হয়েগেছ। এগুলো অপসারণ না করে মধ্যভাগে খাল খনন করা হলে পানির প্রবাহ আসবে না। এতে খনন কোন কাজেই আসবে না। জেলা প্রশাসন থেকে খালের সীমানা নির্ধারণ, উৎসমুখ খনন করে দেওয়া হলেই খনন কাজ শুরু করা যাবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসিব সরকার বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় গতকাল সোমবার আমি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে রিকাবীবাজার খাল পরিদর্শন করেছি। আমরা প্রথমে খালের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ নির্নয় করবো। তার পর কারা কারা দখল করেছে, তাদের নিজ উদ্যোগ সরানোর সময় দেয়া হবে। তা নাহলে উচ্ছেদ করা হবে। আশা করি আগামী বর্ষা মৌসুমে পানি থাকবে রিকাবীবাজার খালে।