মুন্সীগঞ্জে গ্যাস সংকট প্রকট

মুন্সীগঞ্জ শহর-শহরতলীতে গ্যাস সংকট প্রকট আকারে রূপ নিয়েছে। গেলো ৫ সপ্তাহ ধরে দিনরাত মিলে গ্যাস সরবরাহ কমেছে । কয়েক বছরের এমন গ্যাস সংকট দেখেননি এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। কোনো কোনো এলাকায় ২৪ ঘন্টা জুড়েই গ্যাসের চুলো জ¦লছে না আগুন। অনেকে বাধ্য হয়ে কেরোসিনের স্টোভ ও গ্যাস সিলিন্ডার এবং লাকড়ির চুলা ব্যবহার করছেন।
এতে সংসারে রান্নার কাজে খরচ বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কর্মজীবী নারীদের। তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশিন কোম্পানী কর্তৃপক্ষ বলছে স্বাভাবিক সময়ে জেলার ১৩ হাজার ৭১৭ জন আবাসিক গ্যাস গ্রাহকের প্রতিদিন ৮ লাখ ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বর্তমানে গ্যাসের চাপ না থাকায় মিটার ব্যবহার না করে সরাসরি দেওয়া হচ্ছে।
তবে মধ্য ফেব্রুয়ারির পর থেকে গ্যাস সংকট কিছুটা নিরসন হতে পারে। জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের অধিকাংশ গৃহীণী এখন শীত উপেক্ষা করে ভোরে ৪ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে রান্নার কাজ সেরে নিচ্ছেন। ভোর ছয়টার আগেই শেষ করতে হয় রান্না। অন্যথায় উপোস থাকতে হচ্ছে। যারা পারছেন না, তাদের বাধ্য হয়েই খাবার কিনতে হচ্ছে হোটেল থেকে। তবে গ্যাস সংকটের কারণে অনেকে হোটেলেও খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। কাজেই গ্যাস সংকটে স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে।
মুক্তারপুর গোসাইবাড়ির গৃহীণী মিহিলা ইসলাম, নয়াগাঁও এলাকার নাছিমা আক্তার জানান, ৫-৬ সপ্তাহ ধরে ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত একদমই গ্যাস থাকে না। ফলে সারাদিনের খাবার রান্না করতে হয় গভীর রাতে অথবা ভোরে উঠে। শহরের শ্রীপল্লী এলাকার গৃহীণী নিপা বেগম বলেন, বেলা ১১ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত গ্যাসের চাপ খুবই কম থাকে। এক পাতিল পরিমান পানি গরম করতেও আধা ঘন্টার বেশী সময় লাগে।
ভোর রাতে ঘুম থেকে উঠে রান্না করতে হচ্ছে। নয়তো আগের দিনের ঠান্ডা, বাসি খাবার খেয়ে পার করতে হচ্ছে দিন। তিনি আরও বলেন, দুপুরে বাসায় মেহমান এলে সমস্যায় পড়ে যাই। এক কাপ চা করে দেওয়ারও উপায় থাকে না। বাধ্য হয়েই বাইরে থেকে খাবার এনে আপ্যায়ন করতে হচ্ছে।
শহরের মাঠপাড়া এলাকার মেভিন মরিয়ম বলেন, সারাদিনে চুলায় গ্যাসের দেখা পাওয়া যায় না। এজন্য বাধ্য হয়ে এলপি গ্যাস দিয়ে রান্না করতে হচ্ছে। এক হাজার ২৭০ টাকায় ১২ কেজির এলপি গ্যাস দিয়ে ১৫দিন রান্না করা যায়। বাসায় গ্যাস না থাকলেও মাস শেষে গ্যাসবিল ঠিকই দিতে হচ্ছে। রিকাবীবাজার এলাকার সুমাইয়া রহমান বলেন, সকাল ৬ টার পর থেকে গ্যাস নিবু নিবু হয়ে যায়। তারপর দুপুর ৩ টার দিকে কোনো রকমে গ্যাস আসে। তাও পুরোপুরি না। এ রকম অবস্থায় খাবার রান্না করলেও ঠিকমত স্বাদ পাওয়া যায় না।
এদিকে, শহর ও শহরতলীর মুক্তারপুর, গোসাইবাড়ি, নয়াগাঁও, ইদ্রাকপুর, হাটলক্ষীগঞ্জ, শ্রীপল্লী, খালইস্ট, মালপাড়া, মানিকপুর, মধ্য কোটগাঁও, মাঠপাড়া, রিকাবীবাজার, মিরাপাড়া, রনছ রুহিতপুর, জগধাত্রীপাড়া, বাগমামুদালীপাড়া, জমিদারপাড়া, পাচঁঘড়িয়াকান্দি, জোড়পুকুরপাড়সহ বেশ কিছু এলাকায় গ্যাস সমস্যার সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের।
মুন্সীগঞ্জ তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নেই। স্বাভাবিক সময়ে এ জেলার ১৩ হাজার ৭১৭ জন গ্যাস গ্রাহকের প্রতিদিন ৮ লাখ ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বর্তমানে গ্যাসের চাপ না থাকায় মিটার ব্যবহার না করে সরাসরি দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান,শীতে গ্যাস ভারী হয়ে যায় ও জমে যায়। এ সমস্যার কবে নাগাদ কাটবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে ১৫ ফের্রুয়ারির পর থেকে গ্যাস সংকট কিছুটা নিরসন হতে পারে।#