ভ্রমণ পিপাসুদের কেন্দ্রস্থল আড়িয়ল বিল

আরিফুল ইসলাম শ্যামল
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১০:১০ PM, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

চির সবুজের দেশ নদী মাতৃক আমাদের এই বাংলাদেশ। আর আমাদের এ নদীর দেশে মিলেমিশে একাকার হয়ে রয়েছে বিভিন্ন রকম ছোট বড় অসংখ্য হাওর ও বিল। তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে চলনবিল, তামাবিল, ডাকাতিয়া বিল ও ঐতিহ্যবাহী আড়িয়ল বিল। আর বিখ্যাত আড়িয়ল বিলকে কেন্দ্র করে রয়েছে নানা আলোচনা। এই অঞ্চলের লাখ লাখ বসবাসকারী মানুষের অন্য ও অর্থ যোগানের এক যুগান্তকারী মাধ্যম এটি। এখানে রয়েছে হাজার হাজার একর সব কৃষি আবাদি জমি। আর এখন ভরবর্ষা। আড়িয়ল বিলে অথৈ পানি। পুরো বিল এখন হয়ে উঠেছে ভ্রমণ পিপাসুদের কেন্দ্রস্থল। আড়িয়ল বিলের অপরুপ সুন্দর্য উপভোগ করতে এখন প্রতিদিন শতশত পর্যটক আসছেন। লক্ষ্য করা গেছে, ময়ূরপঙ্খী নাও, ট্রলার ও ছোট বড় বিভিন্ন নৌকায় করে দিনব্যাপী বিলের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটছেন ভ্রমণ পিপাসুর দল। উপভোগ করছেন আড়িয়ল বিলের প্রকৃতির সুন্দর্য। বিলের টলমল স্বচ্ছ পানিতে ফুটে আছে শাপলা। শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল হলেও, এখন এটি মানুষের কাছে সবজি হিসেবে ব্যাপক চাহিদা থাকায় নি¤œ আয়ের শতশত মানুষ এখন বিলের শাপলা কুড়িয়ে বিক্রি করছেন। দেখা যাবে শাপলা ভর্তি ডিঙ্গি কোষা নৌকার সমাহার। বিলে পানিতে ভেসে থাকতে দেখা যায় পাণকৌড়ি, বালিহাঁস, বকসহ দেশি বিদেশী হাজারো পাখির ঝাঁক। পাখিদের কলকলানিতে মুখরিত হয়ে উঠে আড়িয়ল বিল। এছাড়াও দেখা যাবে আড়িয়ল বিলে ছোট বড় মিলে প্রায় হাজার খানেকের মত ডেঙ্গা (পুকুর)। ডাঙ্গা গুলোর চারপাশ ঘিরে আছে বিভিন্ন সবুজ গাছ-গাছালী। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ডাঙ্গা রয়েছে যার নাম না বললেই নয়, কলাগাছিয়া, নৈমুদ্দিন, পশুরাম, বাগমারা, সাগরদীঘি, আঠারোপাকি, বৈরাগীর ডাঙ্গা, পদ্মবতী, কালাচাঁন দীঘি, নারিকেল গাছিয়া, তালগাছিয়া, ঝরঝরিয়া। বর্ষাকালে আড়িয়ল বিলের ডাঙ্গাগুলোয় প্রচুর মাছ পড়ে। ভরাবর্ষায় ডেঙ্গাপারে বেসাল পেতে স্থানীয় জেলেদের মাছ ধরার অপূর্ব দৃশ্যে দুচোখ জুড়িয়ে দেয়। এছাড়াও পুরো আড়িয়ল বিল জুড়েই শতশত ভেসাল দেখা যাবে। জেলেরা মনের আনন্দে শিকার করছেন রুই, কাতলা, শোল, মৃগেল, কৈসহ দেশী জাতের বিভিন্ন মাছ। ফরমালিন মুক্ত আড়িয়ল বিলের তাজা মাছও পছন্দমত কেনা যাবে। ভ্রমণে এসে অনেকেই পছন্দের মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর, সিরাজদিখান, ঢাকার নবাবগঞ্জ, দোহার উপজেলা নিয়ে মূলত আড়িয়ল বিলের অবস্থান। ১ লাখ ৬৭ হাজার একর জমি রয়েছে আড়িয়ল বিলের বুক জুড়ে। পদ্মা, ধলেশ্বরী, ইছামতি নদীর মাঝখানে আড়িয়ল বিলের অবস্থান। দৈর্ঘে প্রায় ২৬ কিলোমিটার আর প্রস্থে ১২ কিলোমিটার জায়গা নিয়ে এই বিলের সীমানা প্রচীর। এ বিলের প্রাচীন নাম ছিল চূড়াইন বিল। প্রাচীন বিক্রমপুর কিছু গ্রন্থ থেকে জানা যায় আড়িয়াল খাঁ নামে একটি নদী ছিল। যা কিনা ব্রহ্মপুত্রের নদের শাখা নদীর একটি অংশ ছিল এটি। শাখা নদীটি বিক্রমপুরের ওপর দিয়ে এক সময় প্রবাহিত হত। সে সময় প্রাচীন বিক্রমপুরের অংশ দিয়ে বর্তমানে মাদারীপুরে এখনও আড়িয়াল খাঁ নদীর অস্থিত্ব ইতিহাসের স্বাক্ষী বহন করে। যা কিনা আজও প্রবাহিত হচ্ছে। এক সময় গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ ছিল, পরিবর্তী সময়ে নদীর এ অংশটুকু বিলে রুপান্তিত হয়, তারপর থেকে এটি বিলের রূপ ধারন করে। একটা সময় পূর্বের নাম বদলে আড়িয়াল খাঁ নদীর নাম অনুসারেই এ বিলের নাম রাখা হয় আড়িয়ল বিল।

যদি কখনো রাতের বেলায় বিল ভ্রমণে আসেন তবে দেখতে পাবেন বিলের স্বচ্ছ জলে কি অপরুপ খেলা করছে পূর্ণিমার চাঁদ। আপনার দেখে মনে হবে বিলের অথৈই জলে যেন ফুঁটে আছে নীলপদ্ম যেখানে সাপ আর ভোঁমর খেলা করে। মেঘের সাঁজ দেখে কখনো কখনো মনে হতে পারে মেঘেদের বাড়ি বুঝি বিলের বুক ঘেঁষে নীলাচলে। সৌন্দর্যের নীলাভূমি বিখ্যাত আড়িয়ল বিল দিনদিন ভ্রমণ পিপাসুদের কেন্দ্রস্থল হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

আপনার মতামত লিখুন :