টঙ্গিবাড়ীতে হতদরিদ্রদের পরিবর্তে রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে ভেকু মেশিনে!

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পশ্চিম আলদী গ্রামে অতি হতদরিদ্রদের চল্লিশ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচী বাস্তবায়ন প্রকল্পে অনিয়মের মাধ্যমে টাকা লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় জনসাধারণকে জানাতে প্রকল্পস্থানে বরাদ্ধকৃত অর্থ, শ্রমিকের সংখ্যা ও বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখার নিয়ম পালন করা হলেও হতদরিদ্রদের পরিবর্তে রাস্তার মাটি কাটা হচ্ছে ইঞ্জিনচালিত ভেকু মেশিন দিয়ে। ঘন্টায় দুই হাজার টাকায় ভেকু মেশিন ভাড়া নিচ্ছেন ভেকু মেশিনের মালিক ও ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন বেপারীর ভাগ্নে। এভাবেই সরকারি অর্থ বরাদ্ধ দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের তদারকির অভাবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা সরকারি অর্থ লোপাট করে যাচ্ছে।
এদিকে অতি দরিদ্রদের ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচীতে অনিয়মের বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল বুধবার টঙ্গিবাড়ীর উপজেলা বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। গত বছরও ইউপি চেয়ারম্যান তার সিণ্ডিকেট নিয়ে ধামারণ গ্রামে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ভেকু মেশিন দিয়ে সড়ক নির্মান করেছে।
অভিযোগ রয়েছে, কাঠাদিয়া শিমুলিয়া ইউনিয়নে ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের কাবিখা, কাবিটা ও অতি দরিদ্রদের ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প গুলোতেও নানা অনিয়মের মাধ্যমে ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন বেপারী ও তার সিন্ডিকেট সরকারি টাকা লুটপাটে লিপ্ত। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচী (কাবিখা-কাবিটা) ও অতিদরিদ্রদের জন্য চল্লিশ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচী বাস্তবায়নে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কাঠাদিয়া শিমুলিয়া ইউনিয়নে বিগত অর্থবছরের অনেক প্রকল্পের হদিস মিলবে কিনা তা নিয়েও নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে স্থাণীয় বিভিন্ন শ্রেনীর পেশার মানুষের মনে। এমনকি কাবিটা প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তা নির্মান নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। তারপরও গতকাল বুধবার থেকে পশ্চিম আলদী গ্রামে আবারও ভেকু মেশিনে প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতি দরদ্রিদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী (ইজিইপি) আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ধামারণ গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলামের বাড়ী সংলগ্ন পাকা রাস্তা থেকে সাবেক মেম্বার মৃত জমির আলীর বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা পূর্নঃ নির্মান কাজের প্রাক্কলিত মাটির কাজের পরিমান ৫৬ হাজার ঘনফুট। আর প্রকল্প বাস্তবায়নে বরাদ্ধকৃত অর্থের পরিমান উপকারভোগী মজুরী ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। দৈনিক মজুরি ২০০ টাকা হারে ৪০ কর্মদিবসে ৪০ জন অতি দরিদ্রদের দিয়ে নির্মান কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের চেয়ারম্যান কাঠাদিয়া শিমুলিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আলী হোসেন বেপারী হলেও তাকে কোনো দায়িত্বই দেওয়া হয়নি।
সরেজমিন দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য কাগজেপত্রে প্রকল্পের চেয়ারম্যান হলেও রাস্তা নির্মান কাজের সার্বিক তদারকির দায়িত্ব পালন করছে ইউপি চেয়ারম্যানের সিন্ডিকেট।
প্রকল্প তদারকির দায়িত্বরত ব্যক্তি জানান, ভেকু মেশিন ঘন্টায় দুই হাজার টাকা ভাড়া নিয়ে পাশের জমি থেকে মাটি কেটে রাস্তা নির্মান করছেন। সরকারি বরাদ্ধ কম হওয়ায় রাস্তা সংলগ্ন বাড়ী ও জমির মালিকদের কাছ থেকে কিছু টাকা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি ও সিন্ডিকেট সদস্য জানান, সরকারি বরাদ্ধকৃত অল্প টাকায় রাস্তা নির্মাণ সম্ভব নয়, তাই নির্মিত রাস্তা যারা সুবিধা ভোগ করবে, তাদের কাছ থেকে কিছু টাকা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া জমির মালিকরা তাদের জমি থেকে মাটি দিচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম জানান, অনিয়মের বিষয়টি জানতে পেরেছি। প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।