আমাদের গর্ব শফি বিক্রমপুরী

শেখ রাসেল ফখরুদ্দীন
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৯:৩২ PM, ১৩ অগাস্ট ২০২০

১৯৪৩ সালের ৪ জুলাই (বাংলা ১৩৫০ সালের ২০ আষাঢ়) বিক্রমপুরের শ্রীনগর থানার মত্তগ্রামে নানার বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন শফি বিক্রমপুরী। তিনি একজন খ্যাতনামা চলচ্চিত্রকার ও রাজনীতিবিদ। শফি বিক্রমপুরী বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের অত্যন্ত সফল এবং সকলের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব।
তিনি ১৯৬৪ সালে হলিউডের বিখ্যাত ইংরেজী ছবি ‘এঞ্জেলিক’ এবং ফান্টুমাস’ – এর মাধ্যমে তিনি পরিবেশনার কাজ শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে দক্ষিণাঞ্চলের লোকজ প্রেমকাহিনী অবলম্বনে নির্মিত ‘গুনাই বিবি’ ছবিতে একজন অংশীদার হিসেবে বিনিয়োগ করেন। এরপর কয়েকটি বাংলা এবং উর্দ্দু ছবিও তিনি পরিবেশনা করেন।
১৯৭২ সালে তিনি প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্ত পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘অরুণোদয়ের অগ্নিস্বাক্ষী’ এবং শহিদুল হক খান পরিচালিত ‘কলমি লতা’ ছবি দু’টি যৌথভাবে প্রযোজনা ও পরিবেশনা করেন। একই বছরের নভেম্বর মাসে ঢাকার জোনাকি সিনেমা হলে ‘অরুণোদয় অগ্নিসাক্ষী’ এই ছবিটির প্রেস সো করা হয়। ততৎকালীন সময়ের দেশবরেণ্য ও নন্দিত বহু ব্যক্তিবর্গ এই ছবিটি দেখেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানও সিনেমা হলে ছবিটি দেখেন। ছবিটি মস্কো আর্ন্তজাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হলে সেখান থেকে মেরিট অব ডিপ্লোমা পুরস্কার পায়।
১৯৮৯ সালে ঢাকার মালিবাগে ‘পদ্মা’ এবং ‘সুরমা’ নামে দু’টি সিনেমা হল নির্মাণ করে প্রদর্শক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের সিনেমা হল মালিক সমিতির সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।
উলে­খ্য সেসময়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়নি। এরপর তাঁর প্রযোজনায় নির্মিত ফোক ফ্যান্টাসী যাদুর ছবি ডাকু মনসুর , বাহাদুর ও রাজদুলারী এ তিনটি পরপর সুপার হিট হওয়ায় চলচ্চিত্র অঙ্গনে চমক সৃষ্টি হয়। ১৯৭৮ সালের ২০ জানুয়ারী মুক্তিপ্রাপ্ত সম্পূর্ণ রঙ্গীন ছবি রাজদুলারী চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে।
তিনি বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সরবোর্ডের সদস্য ছিলেন। উল্লেখ্য, তার প্রযোজনায় নির্মিত ফোক ফ্যান্টাসি জাদুর ছবি ‘ডাকু মনসুর’, ‘বাহাদুর’ ও ‘রাজদুলারী’ পরপর সুপারহিট হওয়ায় চলচ্চিত্রাঙ্গনে চমক সৃষ্টি হয়। এরপর তিনি ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সবুজ সাথী’, ‘সকাল সন্ধ্যা’, ‘মাটির কোলে’, ‘শশীপুন্নু’, ‘শান্তি-অশান্তি’, ‘জজসাহেব’, ‘দেনমোহর’, ‘অবুঝ মনের ভালোবাসা’সহ অনেক জনপ্রিয় ছবি উপহার দেন।
তিনি অনেক জনপ্রিয় শিল্পী ও কুশলীকে চলচ্চিত্রে প্রথম আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দেন।
১৯৭৯ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত ২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচনী এলাকা নং – ১৭৮, ঢাকা-৫ ( শ্রীনগর – লৌহজং ) আসনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন।
নির্বাচন শেষে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আহবানে এবং সেসময়ের বিএনপির মহাসচিব অধ্যাপক ডা: এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সহযোগীতায় তিনি বিএনপিতর যোগ দেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে তিনি দলটির কেন্দ্রীয় পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি ন্যায় – নীতিবান, দেশপ্রেমিক সর্বোপরী পরিচ্ছন্ন ও আদর্শবান রাজনীতিবিদ হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত।
রাজনীতির পাশাপাশি বর্তমানে তিনি সমাজ সেবা এবং গ্রন্থ লেখায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তার লেখা অত্যন্ত আলোচিত গ্রন্থ ঢাকায় পঞ্চাশ বছর ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ছয় দশকের ক্যারিয়ারে বহু দর্শকপ্রিয় ছবি পরিচালনা ও প্রযোজনা করেছেন তিনি।

আপনার মতামত লিখুন :